ঘুমের উপকারিতা || ঘুমের প্রয়োজনীয়তা || কত ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন

ঘুমের উপকারিতা






পরিমিত আনন্দদায়ক ঘুমই হলো সুস্থ জীবনের নির্দেশক। একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে, সুস্থ থাকার জন্যে যেমন ভালো খাবারের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন দুশ্চিন্তামুক্ত গভীর ঘুমের। আপনি কতটা ভালো আছেন, তৃপ্তিতে(Relaxly) আছেন তা বোঝা যাবে, আপনার ঘুম ভালো(Deep Sleep) হচ্ছে কিনা তা দেখে।
ঘুমের উপকারিতা || ঘুমের প্রয়োজনীয়তা || কত ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন
ঘুমের উপকারিতা 

জেগে থাকা যে-রকম প্রয়োজন, ঘুমও সে-রকম প্রয়োজন। আমাদের অনেকের সমস্যা হলো আমরা জেগেও থাকি না, আবার ঘুমাইও না। শুধু ঝিমাই। গভীর ঘুম না হলে শরীর কখনো ঝরঝরে হয় না। অর্থাৎ ভালো ঘুমটা অত্যাবশ্যক।

পবিত্র কোরআনের(Quraan Shareef) সূরা ফোরকানে ৪৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি রাতকে করেছেন তোমাদের জন্যে আবরণস্বরূপ। বিশ্রামের জন্যে দিয়েছেন ঘুম। আর প্রতিটি দিনকে করেছেন প্রাণচাঞ্চল্যের প্রতীক। ‘ভগবত গীতায় বলা হয়েছে, ‘অতিভোজী, নিতান্ত অনাহারী(Poor), অতি ঘুম বিলাসী(Lazy), একেবারেই কম ঘুমায় তারা কখনও ধ্যানে সফল হয় না। যিনি নিয়ম অনুযায়ী আহার করেন, কাজ করেন, বিশ্রাম নেন, যার নিদ্রা ও জাগরণ নিয়মের ছন্দে ছন্দায়িত(Maintain Regularity) তিনি ধ্যানে সফল হন। তার দুঃখের বিনাশ ঘটে। বিচরণ করেন আত্মার আনন্দলোকে [ধ্যানযোগ: ১৬-১৭]


ঘুমের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব : যার ঘুম ভালো হয়, তার অসুখ-বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আইরিশ একটি প্রবাদ হলো "A sensible laugh and deep sleep is that the best cures within the doctor’s book" অর্থাৎ ডাক্তারদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রাণবন্ত হাসি ও গভীর ঘুম সবচেয়ে ভালো রোগ নিরাময়কারী।


অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শান্তা রাজারাত্মম(Professor Shanta Rajaratnam) তার একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের পর আমাদের সুস্বাস্থ্যের তৃতীয় ভিত্তি হলো ঘুম। অল্প বা অগভীর ঘুম(Less Sleep) বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা(Diseases) তৈরি করে। সেই সাথে হতাশা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এখনকার প্রজন্ম আগের চেয়ে অনেক বেশি হতাশ ও বিষণ্ন? কেন ? বিজ্ঞানীরা দেখেছেন অনিদ্রা বা গভীর ঘুমের অভাব বিষণ্নতার সবচেয়ে বড় কারণ। ঘুম আর বিষণ্নতার মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কটি বিপরীতমুখী। বিষণ্নতা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, আবার অগভীর ঘুম ঠেলে দেয় বিষণ্নতার দিকে। অর্থাৎ ঘুম ভালো না হলে বিষণ্নতার মাত্রা বাড়ে, আর এর মাত্রা যত বাড়ে ঘুম ক্ষতিগ্রস্ত হয় ততটাই। এ এক দুষ্টচক্র, কিছুদিন টানা চলতে থাকলে পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যে কারণে আমরা দেখতে পাই যারা বিষণ্নতাজনিত কারণে আত্মহত্যা(Suicide) করেছে তারা অনিদ্রা আক্রান্ত ছিল এবং গাদা গাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোনোর ব্যর্থ চেষ্টা করত।

পণ্য আগ্রাসী দেশ আমেরিকাতে ঘুমের সমস্যায় ভুগছে পৌনে তিন কোটি মানুষ। সে দেশে সপ্তাহে একবার ঘুমের সমস্যায় ভোগে এরকম মানুষের সংখ্যা ২২ কোটি। প্রতি বছর ঘুমের ওষুধের পেছনে আমেরিকাতে ব্যয় হয় ৪১ বিলিয়ন ডলার।

গভীর ঘুমের উপকারিতা : 


সু্স্বাস্থ্যের জন্যে ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্কের নিউরোন বিশ্রাম পায়। প্রতিটি নিউরোনের বিপরীতে ১০ টি করে গ্লিয়াল সেল রয়েছে যা ঘুমের মধ্যে তৎপর হয়ে ওঠে। তেমনি এই গ্লিয়াল সেলগুলো নিউরোনের ভেতরে যে টক্সিন থাকে তা ধুয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন করে এবং পরবর্তী দিনের কাজের জন্যে প্রস্তুত করে। অর্থাৎ তখন ব্রেনের টিস্যুগুলো রিপেয়ার হয়। ঘুম ব্রেন সেলকে সতেজ রাখে। ভালো ঘুমালে স্মৃতিশক্তি এবং ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে মস্তিষ্ক ব্যবহারের সক্ষমতা, তার মানসিক অবস্থা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ফলে তিনি পূর্ণ একাগ্রতা ও সর্তকতার সাথে প্রতিটি কাজ করতে পারেন। সারাদিনে ঘটে যাওয়া মাসেল, সেল ও হাড়ের ক্ষয়ক্ষতির মেরামত হয় ঘুমের মধ্যে। এ সময়ে ইনসুলিনের উৎপাদন বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত সুগার বার্নআউট করে। যে কারণে ডায়াবেটিক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পর্যাপ্ত ঘুম হৃদপন্ডিকে(Heart) সুস্থ রাখে তাই দেহের ভেতরে রক্তপ্রবাহ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। শারীরিক কাজ করার সামর্থ্য বেড়ে যায়। রোগ প্রতিরোধক শক্তি বেড়ে যায়।
ঘুম না হওয়ার পরিণতি :


১. ক্রমাগত পরিমিত ঘুম থেকে বঞ্চিত হতে থাকলে খিটখিটে মেজাজ হতে পারে। ফলে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ পরিমিত ঘুমের অভাবে অল্পতেই একজন মানুষ রেগে(Angry) যায়।

২. যে দিন ভালো ঘুম হয় না তা ত্বক দেখলেই বোঝা যায়। কারণ এর প্রথম দৃশ্যমান প্রভাব পড়ে ত্বকে। ঘুম ত্বকের মেরামত করে। অপরিমিত ঘুম ত্বকের লাবণ্য কমিয়ে নিষ্প্রাণ করে ফেলে।

৩. ক্রমাগত ঘুম কম হলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ক্রনিক অনিদ্রায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

৪. দীর্ঘদিন ঘুমে অনিয়মের ফলে রক্তের রাসায়নিক উপাদানে(Chemical Elements) পরিবর্তন ঘটে যা হাইপারটেনশনের(Hypertension) কারণ। অপরিণত ঘুমের ফলে সৃজনশীলতা, প্রাণবন্ততা, কর্মতৎপরতা কমে যায়।

৫. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে খাবার হজমে(Digest) সমস্যা হয়, রক্তপ্রবাহের সমস্যার কারণে স্ট্রোক ও হার্ট এর্টাকের(Heart Attack) সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণে। কেউ টানা চার দিন জেগে থাকলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগতে আরম্ভ করবে।

৬. আলঝেইমার্স বা স্মৃতিভ্রষ্ট্রতার(Alzheimer's or Dementia) অন্যতম প্রধান কারণ অপর্যাপ্ত ঘুম।

আমরা অনেকে অনিদ্রা দূর করার জন্যে ওষুধ খাই কিন্তু হাজার হাজার মেডিকেল এক্সেপেরিমেন্টে প্রমাণিত হয়েছে যে, ওষুধ খেয়ে যে ঘুম তাতে কখনো গভীর নিদ্রা হয় না। কারণ স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের ঘুমের মধ্যে যতটা প্রশান্ত থাকে তা ওষুধ খেয়ে হয় না। কাজেই ওষুধ খেয়ে তিনি স্বাভাবিক ঘুমের উপকার থেকে বঞ্চিত হন। তার ভেতরে অস্থিরতা, খিটখিটে মেজাজ ও শারীরিক দুর্বলতার লক্ষণগুলো দেখা যায়।



আপনি আরও পড়তে পারেন...


Comments

Popular posts from this blog

ঘনবস্তুর সংজ্ঞা || ঘনবস্তু কাকে বলে? || ঘনবস্তু কত প্রকার ও কি কি? || ঘনবস্তুর মাত্রা কয়টি ও কি কি

রাশি কাকে বলে? || রাশি কতো প্রকার ও কি কি?

 ভার্নিয়ার স্কেল কী? || ভার্নিয়ার ধ্রুবক কাকে বলে?